গল্প – করোনার মধ্যে বিয়ের প্রস্তাব!

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ঘটক মফিয ফোনে এক ছেলের পরিবারের নিকট একজন ডাক্তারি মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দিল। ছেলের পরিবার খুব খুশি কারন এই মেয়েকে যদি এখন ঘরের বউ করে আনা যায় কোনভাবে তাহলে আর করোনা হলে বাসায় পরে থেকে কারো মরতে হবে না! বউ ডাক্তার বলে কথা, তাও আবার বেসরকারি নামকরা একটি হাসপাতালের! একটা ফোন দিবে, নগদ আম্বুলেন্স এসে হসপিটাল এ নিয়ে যাবে… সরকারী হাসপাতালের মত রাস্তায় ফেলে রেখে ভাগবে না!

তো এই পরিস্থিতিতে ছেলেটি কিভাবে মেয়েটার সাথে দেখা করবে? মেয়ে বের হতে পারে ডাক্তার বলে, কিন্তু ছেলে তো বিদেশ ফেরত! ইতালিতে এক বার এ ওয়েটার এর চাকরি করত। করোনা পরিস্থিতির পর কর্মী ছাটাই এর তালিকায় বেচারার নাম পরে যাওয়াতে বাংলাদেশে চলে আসতে হল। নাহলে তো ভালই কামাই হচ্ছিল। আর বাংলাদেশের সবাই জানত ছেলে এক সফটওয়্যার কোম্পানিতে সিনিয়র পোস্ট এ জব করছে!

যাই হোক, ছেলের পরিবার ছেলেকে বলল হাসপাতালে যেয়ে মেয়েটার সাথে দেখা করার জন্য। ছেলের মা শিখিয়ে দিল, পুলিশ ধরলে বলবি, তোর স্ত্রী ডাক্তার – তাঁকে হাসপাতাল থেকে আনতে যাচ্ছিস!

ছেলেটার সাথে মেয়েটার ২-১ বার কথা হয়েছিল এর মধ্যে। ছেলেটা হাসপাতালে যেয়ে দেখা করবে বলায় মেয়েটি অবাক হল, কিন্তু রাজি হল।

———————————————

ছেলেটা কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই নিজের গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে পোউছাল। দশম তলায় যেয়ে ২ কাপ কফি নিয়ে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

মেয়েটা এসে ছেলেটার সামনের চেয়ারে বসল। দুজনি কিচ্ছুক্ষণ চুপচাপ কফি খেতে লাগল। কি বলে কথা শুরু করবে তা কেউই বুঝে উঠতে পারছিল না।

– ছেলেটা বলল, আপনাদের এখানে করোনা রোগী কেমন আসে?

– মেয়েটি বলল, আসে অনেকেই ঠাণ্ডা, জ্বর আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে কিন্তু সবাইকে করোনা টেস্ট করানো যাচ্ছে না, কিট সল্পতার জন্য!

– তাহলে কোন সময় আপনারা করোনার পরীক্ষা করান?

– যখন রোগী শ্বাস নিতে একদমই পারে না, আর এর সাথে জ্বর অনেক বেড়ে যায়, তখনি করোনা টেস্ট করা হয়।

– তাহলে আপনাদের ভয় লাগে না যারা ঠাণ্ডা, জ্বর আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসে তাঁদের চিকিৎসা দিতে?

– কেন, ভয় লাগবে কেন? আমরা ডাক্তার হয়েছি তো রোগীর সেবা করার জন্যই। আর রোগীর জ্বর থাকলে আমরা আইসলেশন রুম এ নিয়ে যাই প্রথমেই, ওইখান থেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়।         

– করোনায় তো অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, আপনাদের এখান থেকে কয়জন মারা গেছে এখনও পর্যন্ত করোনায়?

– এখনও পর্যন্ত কেউই মারা যায়নি। আসলে আমরা তো সব সময় নেগেটিভ জিনিস খেয়াল করি। আপনি যে সফটওয়্যার কোম্পানিতে জব করছেন, ওখানেও দেখবেন কোন সফটওয়্যার এর সামান্য সমস্যা হলেই আপনাদের সাপোর্ট সেন্টার এ ফোন করে যাচ্ছেতাই কথা বলে অনেকে, অথচ সারা বছরে হয়ত এরকম ঘটনা ১-২ বার ঘটে। তেমনি দেখুন, করোনায় হয়তো মারা যাচ্ছে ১০০ জনে ৫ জন হয়তো, ৯৫ জনই কিন্তু সুস্থ হয়ে বাসায় যাচ্ছেন… কিন্তু সবাই ব্যস্ত আমরা ওই ৫ জন কে নিয়ে। ৯৫ জন যে সুস্থ হয়ে উঠছেন তাঁদের কথা কিন্তু কোথাও হচ্ছে না।

– ছেলেটি আর একটু হলে বলতে যাচ্ছিল, কোন সফটওয়্যার কোম্পানির কথা বলছেন? আমি তো জব করতাম একটা বার এ। তাও ২ মাস আগে। কিন্তু অল্পের জন্য কথাটা মুখেই থেকে গেল! ভাগ্যিস বেফাঁস হয়নি। আলতো করে ঢোক গিলে মেয়েটিকে বলল, তাহলে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন ৫ জনের জীবনের কোন মূল্য নেই?

– আমি কি তা বলেছি? দেখুন আমরা যখন নেগেটিভ জিনিস নিয়ে সারাক্ষণ ভাবব, তখন এর প্রভাব আমাদের শরীর এবং মনে পরবে। এ অবস্থায় আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করবে। এই মনোভাব নিয়ে যদি কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়, তখন ধরেই নেয় যে তিনি মারা যাবেন। যদি ভাল দিকটা নিউজ মিডিয়া এবং সব জায়গায় দেখান হতো তাহলে কিন্তু ভাবতেন তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন ইনশা’আল্লাহ। আর দেখুন মৃত্যু আমাদের সবার জন্য কিন্তু নির্ধারিত। আমরা সবাই কিন্তু মারা যাব। তাহলে এত ভেঙ্গে না পরে আসলে এসময় যারা পজিটিভ থাকবেন, তাঁদেরই কিন্তু সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।  

– ছেলেটি হেসে বলল, আপনি তো দেখছি মাওলানাদের মত কথা বলছেন! যখন মৃত্যু আসবে তখন মৃত্যু হবে, তাহলে আর পরওয়া কিসের? মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় নামি, “Social Distance” আর না মানি! অনেক মাওলানা তো এও বলছেন, কয়েকটা সুরা প্রতিদিন পড়লে করোনা ধারে-কাছেও আসতে পারবে না! এগুলো কি ঠিক বলেন?

– আপনি কোন মাওলানাদের ফলো করেন আমি জানি না, তবে এ ব্যপারে আপনি আন্তর্জাতিক খ্যতিসম্পন্ন যে কয়জন আলেম-মাওলানা, “Islamic Scholars” আছেন, তাঁদের লেকচার আপনি ফলো করতে পারেন যেমন – নওাব আলি খান, মুফতি মেঙ্ক, বিলাল আসাদ, হামযা ইউসুফ… এরা সবাই ইংরেজিতে বয়ান দেয়। আপনার যদি উর্দু বা হিন্দির উপর দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনি পাকিস্তানের “তারিক জামিল” এর বয়ান ও শুনতে পারেন।

– না আমি ইংলিশ এই বয়ান শুনব। “I don’t have any problem understand English”!

– এই অবস্থায় ডাক্তার বুঝে গেল, ছেলেটি হচ্ছে চারাল টাইপ এর লোক। অনেকক্ষণ ধরে কোণঠাসা করতে চাইছে। মনে হচ্ছে যেন তর্ক করতে আসছে। মেয়ে দেখতে আসেনি। আবার নিজেকে পণ্ডিত জাহির করতে চাচ্ছে। মেয়েটি ভাবছিল, তাঁকে হয়ত জিজ্ঞেস করা হবে, আপনার পছন্ধের রঙ কি? কি খেতে ভালবাসেন? কি করতে ভালবাসেন অবসর সময়ে… সেগুলো না করে খালি করোনার ব্যপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে!!!

– ছেলেটি আবার বলল, আপনি কিন্তু আমার প্রশ্নটার সরাসরি উত্তর দেননি?   

–  কোন প্রশ্নটার?

– ওই যে, কয়েকটা সুরা প্রতিদিন পড়লে করোনা ধারে-কাছেও আসতে পারবে না!

– আসলে এটা অনেক বড় একটা টপিক। এত সংক্ষিপ্ত সময় এ বোঝান যাবে না।

– ছেলেটি বিজয়ের হাসি হেসে বলল, বুজছি আপনি টপিক পাল্টাতে চাচ্ছেন। আচ্ছা অন্য প্রশ্ন করি… আপনি কি খেতে ভালবাসেন?

– মেয়েটি বুঝতে পারল, এই ছেলেটির হাদিস এর ধারনা খুবই কম। আর মেয়েটি নিজে ডাক্তার হলেও ৫ ওয়াক্ত নামায পড়েন, আর হাদিস চর্চাও করেন। সুতরাং, তিনি ঠিক করলেন ছেলেটির কিছু পরীক্ষা নিবেন। ছেলেটির প্রশ্নের জবাবে মেয়েটি বলল, আমি আজওয়া খেজুর খেতে ভালবাসি।

– আমিও খেজুর পছন্দ করি, কিন্তু আজওয়া? এটার নাম তো কোন সময় শুনিনি!

– আচ্ছা তাই? তাহলে কোন খেজুর খান আপনি? নাম জানেন?

– ছেলেটি বোকার মত হেসে বলল, তা তো খেয়াল করিনি কোন সময়। আচ্ছা, আর কি খেতে ভালবাসেন?

– আমি মধু খেতে ভালবাসি, ঘি পছন্দ করি। কালিজিরার ভর্তা খেতেও ভালবাসি।

– মাংস পছন্দ করেন, নাকি মাছ?

– খাসির মাংস আমার সবচেয়ে পছন্দের…

– সুন্দর একটা ঘ্রান পাচ্ছি। পারফিউম এর নিশ্চয়ই। কি পারফিউম ব্যবহার করেছেন?

– “Armani Acqua Di Gioia by Giorgio Armani

– বাইরে থেকে আনিয়েছেন নাকি দেশ থেকে কিনেছেন?

– না মশাই! বাইরে থেকে আনাইনি, আমাদের দেশেই অনেক ভালো ভালো পারফিউম বিক্রেতা আছে, তাঁদের একজনের কাছ থেকে নিয়েছি।

– তাই বাংলাদেশ এত উন্নত হয়ে গেছে? আমি তো জানতাম বাংলাদেশ এ খালি নকল কসমেটিক্স আর পারফিউম বিক্রি করে।

– ভুল ধারনা। আমি এই পারফিউমটি নিয়েছি “BPIB” এর কাছ থেকে। তাও অনলাইন এ অর্ডার করে!

– আরেব্বাস, এত সাহস আপনার! অনলাইন থেকে নিয়েছেন, না দেখে?

– জি, আপনিও নিতে পারেন। ওরা বেশ ভালো করছে পারফিউম এর ব্যবসায়…আচ্ছা এবার আমি প্রশ্ন করি, আপনি কোথায় জব করেন?

– STRAVINSKIJ বার এ। ছেলেটি তৎক্ষণাৎ জিহবা কামড় দিয়ে বলল, সরি ওটাতে আমি আগে জব করতাম এখন জব করি “IT Tech Limited” এ।

 – ও তাই? আচ্ছা, আপনি কি ধূমপান করেন? সত্যি করে বলবেন কিন্তু, কারন যার সাথে সংসার করব তার ব্যপারে আগে থেকেই এই সমস্ত জিনিস জেনে নেয়া ভালো।

– ছেলেটি আমতা আমতা করে বলল, জি করি।

– মাঝে মাঝে মদ ও খান নিশ্চয়ই? ইতালিতে ছিলেন, ওখানে তো এটা খুবই কমন ব্যপার তাই না? মেয়েটি এর মধ্যেই মোবাইল এর মাধ্যমে গুগল থেকে STRAVINSKIJ বার এর ওয়েবসাইট বের করে ফেলেছে।

– না না আমি ওসব ছাইপাশ খাই না। ওই বন্ধু-বান্ধর এর বিয়েটিয়েতে এক-আধবার খেয়েছি আর কি। তেমন কিছু না।

– মেয়েটি বুঝতে পারল, ছেলেটি মিথ্যা কথা বলছে। এই মুহূর্তে মনে মনে ঠিক করে ফেলল, এই ছেলেকে বিয়ে করা যাবে না। এবার একটু শক্ত গলায় মেয়েটি বলল, আপনি জানেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারা বেশি মারা যাচ্ছে?  

– ছেলেটি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কারা?

– যারা আপনার মত ধূমপান করে, মদপান করে, তারা।

– এই কি বলছেন আপনি, আমি কি বলেছি, যে আমি সব সময় মদ খাই? কি আবল-তাবল বকছেন আপনি?

– আমি আবল-তাবল বকছি না। আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমরা তাই দেখতে পাচ্ছি। যারা ধূমপান-মদপান করেন, তাঁদেরই মৃত্যুহার বেশি থাকে। যাই হোক, আমি এখন উঠবো, আমার এক “patient” এর “update” নিতে যেতে হবে।

– ঠিক আছে, আমার ও এক কাজিন এর সাথে দেখা করতে যেতে হবে।

—————————————————-

– ছেলেটি লিফট এ নিচে নামার সময় মনে মনে বলল, বালের ডাক্তার হইছে। একে বিয়ে করা যাবে না, আসল ডাক্তার হল তাঁরা যারা রোগ-মুক্তির জন্য হালকা “গাঁজা” খাওয়ার পরামর্শ দেয়, ২ পেগ মদ খেলে বলে তা হার্ট এর জন্য ভালো। বিদেশের ডাক্তারই ভালো। এত পণ্ডিত ভাব দেখায় না।

About 

Buyperfumeinbangladesh.com, বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ওয়েবসাইট যারা নামি দামি ব্র্যান্ডের পারফিউম এর অনেক বড় সংগ্রহ নিয়ে অনলাইন এ যাত্রা শুরু করে। আমাদের সকল পারফিউম ১০০% অরিজিনাল এবং ব্র্যান্ডের পারফিউম। আমরা কোন নকল বা রেপ্লিকা পারফিউম বিক্রি করি না।

  • facebook
  • pinterest
  • twitter
  • youtube

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Open chat
Need help?
Send Whatsapp
Hello, if you need any queries, we are here to help!